শিক্ষক সমন্বয়হীনতায় কাজিপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত
মাহমুদুল হাসান শুভ কাজিপুর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেখা দিয়েছে শিক্ষক সমন্বয়হীনতা। কোন কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছে কেশ কয়েকজন কিন্ত কাক্সিক্ষত শিক্ষার্থী নেই। আবার কোনটিতে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক নেই। যমুনা নদী দ্বারা বিভক্ত কাজিপুরের চরাঞ্চলে অবস্থিত ছয়টি ইউনিয়নের ১১৫ বিদ্যালয়ে এই সমস্যা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় দেখা দিয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। এর কারণে অভিভাবগণ তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো থেকে সরিয়ে নিয়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়তে দিচ্ছেন। গত কয়েকবছর যাবৎ এই অবস্থা চলে আসলেও এখনো এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ।
কাজিপুরে মোট ২৩৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষক রয়েছে মোট ১ হাজার চারশর মতো। সরেজমিন চরাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঘুরে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের অনুপাতে অনেক গড়মিল দেখা গেছে।
চর ডগলাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় মোট শিক্ষার্থী ২০ জন। ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক রয়েছে ৫ জন। শরৎনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৩০ জন, শিক্ষক রয়েছে ৪ জন। আবার পশ্চিম চরগিরিশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১৩০ জন হলেও এখানে শিক্ষক আছেন মাত্র ৩ জন। কালিকাপুর খ প্রকাশ সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে ৫০ জন, শিক্ষক ৪ জন। চরগিরিশ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৮০ জন শিক্ষক ৪ জন। দক্ষিন মহিমাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ২০ জন, শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। একই দিনে জগন্নাথপুর ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে শিক্ষার্থী ৫০ জন, শিক্ষক ৪ জন।
চরাঞ্চলে কর্মরত শিক্ষকগণ জানান, শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তিনজন শিক্ষক যেখানে ১২০ জন শিক্ষার্থীকে পড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে ২০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে পাঠদান করাচ্ছেন ৫ জন শিক্ষক। আবার তিনজন শিক্ষকের একজনকে অনেক সময় সরকারি কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। তখন পাঠদানের অবস্থা আরও শোচনীয় পর্যায়ে যায়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ায় প্রাথমিকে শিক্ষার বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করেছে। যেখানে শিক্ষার্থী কম সেখানকার শিক্ষকেরা বসে বসে অলস সময় পার করছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক শিক্ষক জানিয়েছেন।
চরের ক্লাস্টারের সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম বলেন, দুর্গম অঞ্চল হওয়ায় সাধারণত শিক্ষকেরা বাধ্য না হলে চরে যেতে চান না। বদলী করা হলেও নানা তদবির করে আবারো চর থেকে বিড়া অঞ্চলে আসেন তারা। ফলে ইচ্ছে করলেও সমন্বয় রাখা সম্ভব হয় না।
কাজিপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, চরাঞ্চল ভাঙন প্রবণ। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতি বছরই স্থানান্তর করতে হয়। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অনুপাতে পার্থক্য ঘটেছে। তবে সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। #
মাহমুদুল হাসান শুভ, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ
২৪/৭/২৫ ০১৭৯২৯৯৭৫৪৩








