নন্দীগ্রামে অসহায় রব্বানী সাত বছর শিকলবন্দী, চিকিৎসা করিয়ে পরিবারের অবস্থা আশঙ্কাজনক
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা মাঝগ্রাম ইউনিয়নের পারশুন গ্রামের ক্ষুদেপাড়ার ২৭ বছর বয়সি রব্বানী হোসেনের জীবন সাত বছর ধরে শিকলে বন্দি। তাকে শিকলমুক্ত করে ছেড়ে দিলে ছোটাছুটি করে, যাকেই সামনে পায় তাকেই মারধর করে। মুক্ত থাকলে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটায় এমন আশঙ্কায় শিকলে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রব্বানীর থাকার মতো একটি কুঁড়েঘর।
ঘরের সামনের দরজার দেয়ালের মাঝে ছোট একটি ফাঁকা জানালার ওপর বসে আছে রব্বানী। হাতে শিকল, জানালার সঙ্গে শিকলে তালা লাগোনো। সে কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছে। কখনো হাসি-কান্নার মধ্য দিয়েই কাটছে তার জীবন।মাঝে মাঝে কথা বলে, তবে অস্পষ্ট। পরিচিত কাউকে দেখলে কখনো চিনতে পারে, আবার মুহূর্তের মধ্যেই নিজের কাছেও অচেনা হয়ে যায় রব্বানী। ভুলে যায় পরিবার ও পরিচিতদের। অস্বাভাবিক আচরণের সঙ্গে শুরু হয় চিৎকার।সন্তানের এ অবস্থা দেখে চিন্তায় কাঁদছেন মাতা।
পরিবার জানায়, পারশুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে রব্বানী। ২০১৮ সাল থেকে হঠাৎই সে মানসিক ভারসাম্য হারায়। রব্বানীর হাতে বা পায়ে শিকল পরা অবস্থায় দিনের শুরু হয়, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারেও থাকে শিকল। গোসল, খাওয়া এবং রাতের ঘুমসহ ২৪ ঘণ্টাই শিকলে বন্দি।
নিত্যদিনের সঙ্গী লোহার শিকল। ২০১৯ সালে বাড়িতেই তাকে শিকলবন্দি করা হয়। রব্বানীর পিতা গোলাম মোস্তফা অন্যের জমিতে কৃষাণের কাজ করেন। তার মা মর্জিনা বেগম নিজেও নানা রোগে অসুস্থ। এর পরেও অসুস্থ সন্তানের যত্ন নিচ্ছেন। পরিবারে দুই ভাই ও এক
বোনের মধ্যে রব্বানী সবার বড়। অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারিভাবে চিকিৎসা সহযোগিতার জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসক ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেছে রব্বানীর পরিবার।
গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে রব্বানীর মা মর্জিনা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার মা বলেন, দিনে ও রাতে ছেলের পায়ে, কখনো হাতে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। এ দৃশ্য মা হয়ে সহ্য করতে পারছি না। নিজেও সারা রাত ঘুমাতে পারি না। গরিব মানুষ, ঠিকমতো সংসার চালানোই আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ছেলের উন্নত চিকিৎসা করব কিভাবে? রব্বানীকে শিকলমুক্ত রাখলে গ্রামের মানুষ এবং পশু যা সামনে পায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাড়ি ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। সন্তানকে হারাতে চান না, মানুষের ক্ষতি করবে ভেবে নিরুপায় হয়ে শিকলবন্দি করে রেখেছেন।
রব্বানীর চাচা জানায়, তাদের শেষ সম্বল মায়ের ১৬ শতাংশ জমি ও সাড়ে ৫ আনি গহনা বিক্রি করে চিকিৎসা করেছেন। ২০টির বেশি কবিরাজ, ডজনখানেক ডাক্তারও দেখিয়েছেন। বর্তমানে তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। এ জন্য চিকিৎসা বন্ধ। সরকারিসহ বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়ে নিজের ০১৭৬৬৩৪৮৭৯৭ মোবাইল নাম্বার দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শামসুর রহমান জানান, রব্বানী বিষয়ে তিনি যথেষ্ট নিজের অর্থ ও সরকারি অর্থ থেকে সহযোগিতা করবেন এবং রব্বানী কে সরকারি হাসপাতাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।তার পরিবারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করবেন।








